অপ্সরীর ভালোবাসা
ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম।
মেঘলা আকাশ।
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।আজকাল হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না।শুরু হলো ভারি বর্ষন।অনেকদিন ধরেই বৃষ্টিতে ভেজা হয় না,তাই ভাবলাম আজকে বৃষ্টিতে ভিজেই বাসায় ফিরব।মোবাইল,ঘড়ি সবকিছুই ব্যাগের ভেতরে তাই বৃষ্টিতে ভেজার কোন ভয় ও নেই।ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে হাটা ধরলাম।এসময় মিনার রহমানের ঝুম গানটা বাজলে খুব ভালো লাগত।ফুটপাত ধরে হাটছি এমনসময় পেছন থেকে একটা মিষ্টি কন্ঠ কানে এলো
-এইযে শোনছেন
পেছন ফিরে তাকালাম।রংচঙা ছাতা মাথায় একটা মেয়ে আমাকেই ডাকছে।মনে হলো যেন স্বর্গ থেকে একটা অপ্সরা নেমে এসেছে।তার আলোয় পৃথিবী আলোকিত হয়েছে।ফুটফুটে সাদা একটি মেয়ে।হালকা বাতাসে চুলগুলো সামান্য নড়ছে।মেয়েটির পরনে হালকা হলুদ রঙ্গের একটা জামা।মনে হলো জামাটায় তাকে বেশ মানিয়েছে।হলুদ রং আমার খুবই প্রিয়, হয়তোবা সেজন্যই তাকে দেখে এতোটা মুগ্ধ হয়েছিলাম।
-কি হলো বৃষ্টিতে ভিজছেন কেন?
-বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে হলো তাই।
-বৃষ্টিতে ভিজলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।ছাতার মধ্যে আসুন।
আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে।মনে হলো কোথায় যেন তাকে আমি দেখেছি।
-কি হলো আসুন।
আমি বাধ্য ছেলের মতো ছাতার নিচে চলে এলাম।পাশাপাশি দুজনে একসাথে হাটছি।একধরনের অন্যরকম অনুভতি অনুভব করলাম।মনে হলো এরকম একজনকেই সঙ্গী হিসেবে চাইছিলাম,যাকে সাথে নিয়ে সারাটা পথ চলব।
-আপনি মনে হয় আমাকে চিনতে পারেন নি?
-স্যরি ঠিক খেয়াল আসছে না।(আমি একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললাম।
-আমি রিসা।আপনি যেখানে কোচিং করেন আমিও সেখানেই কোচিং করি অন্য ইউনিটে।
(এবার বুঝলাম কোথায় দেখেছি)
-আমি হিমু(সবখানে নিজেকে হিমু নামেই পরিচয় দেই)।আমি আসলে ভাবছিলাম কোথায় যেন আপনাকে দেখেছি,কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছিলাম না।এবার চিনতে পেরেছি।
-আপনাকে দেখেই বুঝতে পেরেছি আপনি আমাকে ঠিক চিনতে পারেন নি।
-(আমি আবার হাসি দিলাম)আচ্ছা আপনার প্রিয় রং কি?
-হলুদ।আপনার?
-আমারও।হিমুরা সবসময় হলুদ পান্জাবি পড়ে তো তাই।
-ও হে বলতে ভুলে গেছি আপনার নাম কি আসলেই হিমু নাকি আপনার নিজের দেয়া না?
-আমার নামই হিমু
-আপনার বাবা-মা কি হুমায়ুন প্রিয় ছিল?
-আমার বাবা-মা ছিল কি না যানি না তবে তাদের ছেলে হুমায়ুন ভক্ত।তাই তার নাম সে নিজেই রেখেছে।
মেয়েটা একটা হাসি দিল।হাসিতে যেন মুক্তোর মালা ঝড়ে পড়ছে।এই হাসি দেখেই যে কেও এই মেয়ের প্রেমে পড়ে যাবে।
-আপনি বুঝি খুব হিমু ভক্ত
-খুব।খুব খুব খুব।
-বেশ ভালো।
-আচ্ছা আপনি বই পড়তে ভালোবাসেন?
-মাঝে মাঝে।সবসময় পড়া হয় না।
-কার বই বেশি ভাল লাগে।
-আমার কাছে সায়েন্স ফিকশনের বই খুব ভালো লাগে।লেখক যে কেও হলেই হলো।আপনি?
-আমি হুমায়ুন স্যারের অন্ধ ভক্ত।তবে গোয়েন্দা গল্পও অনেক ভালো লাগে।
-
দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো।বৃষ্টি যে কখন থেমে গেছে টের ই পাইনি।একবার ভাবলাম মেয়েটার কাছ থেকে কি তার নাম্বার চাইব,যদি খারাপ ভাবে।তারপর ভাবলাম ফেসবুক একাউন্টটা চেয়ে দেখি যদি দেয়।
-আচ্ছা তোমার ফেসবুক একাউন্টটা দিবা মাঝেমধ্যে কথা বলতাম যদি তুমি কিছু মনে না করো।
-না না এতে মনে করার কি আছে।মোবাইলটা দাও এড দিয়ে দেই।এই নাও এড দিছি।আমার বাস চলে আসছে।আজ আসি।
বাসটি চলে গেল।আমি সেদিকে তাকিয়েই রইলাম।মনে হলো অনন্তকাল এ পথে তাকিয়ে থাকতে পারব।কখন যে দুজনে আপনি থেকে তুমিতে নেমে পড়েছি তা খেয়ালই করিনি।রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অনেকক্ষণ চ্যাট হলো।দুজনের ভালোলাগা মন্দলাগা নিয়ে অনেক কথা বললাম।কোচিং এ দেখা,বিকেলে একসাথে ঘুরতে যাওয়া,রাতে ফোনালাপ সবকিছুই যেন স্বপ্নের মতো কেটে যাচ্ছিল।দেখতে দেখতে অনেকগুলো দিন কেটে গেল।হঠাৎ লক্ষ করলাম সে কয়েকদিন ধরে ক্লাসে আসছে না,ফোনটাও আনরিচেবল দেখাচ্ছে। আমি যেন পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছি।কোনকিছুই ভাল লাগছে না।বুঝতে পারলাম তাকে আমি কতটা ভালবেসে ফেলেছি।তার ইউনিটে গিয়ে খুজ করলাম কেওই ঠিকানা দিতে চাচ্ছে না।অনেক কষ্টে ঠিকানা জোগাড় করলাম।বিকেলে ক্লাস শেষে সোজা চলে গেলাম তার বাসায়।কলিংবেল চাপলাম।আন্টি দরজা খুলল।
-আন্টি স্লামালাইকুম।
-কাকে খুজছ বাবা।
-আন্টি আমি রিসার ফ্রেন্ড।রিসা তো কয়েকদিন ধরে ক্লাসে আসছে না তাই তাকে শিটগুলো দিতে এসেছি।
-ও,ভিতরে এসো বাবা।রিসা তো কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ তাই ক্লাসে যাচ্ছে না।তুমি রিসার রুমে গিয়ে বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
আমি রিসার রুমে গেলাম।দেখি মহারানী জানালার দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে।
-তোমার ফোন বন্ধ কেন?
-হঠাৎ আতকে উঠে আমার দিকে তাকাল।অবাক হয়ে বলল তুমি এখানে কিভাবে।
-হাওয়ায় ভেসে এসেছি।তোমার ফোন বন্ধ কেন?
-আম্মু মাথায় পানি দিতে গিয়ে পানিতে ফেলে দিছে।(একটা হাসি দিল)
-জানো এই কয়টা দিন আমি কিভাবে ছিলাম।কতো পাগলের মতো খুজেছি তোমায়।একটা রাতও ঘুমাতে পারি নি।
-তুমি আমায় খুজছ কেন?
-তোমাকে ভালবাসি বলে।
-কিন্তু আমি তো বাসি না।
-বাসো না?
-না
-তাহলে চলে যাই।
-কোথায় যাও।একটা উষ্ণ হাত আমার হাতটি ধরল।মনে হলো কে যেন আমার হাত শেকল দিয়ে বেধে রেখেছে।কখনোই ছাড়াতে পারবো না।
আমি অভিমানি সুরে বললাম
-যেদিকে দুচোখ যায়
-আমায় সঙ্গে নেবে না।
-তোমায় কেনো সঙ্গে নেব?
-তোমায় ভালবাসি বলে।
-ভালোবাসো
-হুম
-কাকে?
-তোমাকে
-সত্যি
-সত্যি।সত্যি।সত্যি।তিন সত্যি।
আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না।এই উষ্ণ শরীরটা আলিঙ্গন করলাম।আমার চোখ দিয়ে সুখের অস্রু বয়ে যাচ্ছে।জড়িয়ে ধরে বললাম
-তোমাকে ছাড়া আমি বাচতে পারব না।
-আমিও না
-
বাকিটা ইতিহাস__________
Comments
Post a Comment